সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি ও সহযোগিতার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
  • আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি
  • র‌্যাব পুনর্গঠন করা হবে, পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নেপালের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সাক্ষাৎ
  • গেজেট এলে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে
  • দেশের ইতিহাসে গুমের সূচনা করেছে আওয়ামী লীগ
  • ফ্যাসিস্ট শাসকের পলায়নে গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে
  • স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন
  • শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা
  • মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষমতা পেলো সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় দিনমজুর সাজেদুল

রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২৩, ১৮:০০

সাজেদুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন

সাজেদুল ইসলাম নামের ছেলেটি কখনো অন্যের জমিতে ধান কেটেছেন, কখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যেই কখনো খেতে না পেয়ে, কখনো আধপেটা খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। গত আট বছর ধরে ছোট্ট ঘরটার বারান্দায় ভাঙা চৌকিতে থাকা ও পড়াশোনার কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সেই সাজেদুল এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে এত সাফল্যের পরও ভর্তি ও থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর।

 

সাজেদুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগে। ভর্তির পর প্রতি মাসে অন্তত ৫ হাজার টাকা লাগবে। আগামীকাল কী খাওয়া হবে, সেই চিন্তায় যে পরিবার অস্থির থাকে, সেই পরিবার এত টাকা কোথায় পাবে? ভর্তিসহ পড়াশোনার খরচের চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না তাঁর।

 

 

অদম্য মেধাবী সাজেদুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের খিয়ারপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা জাহিদুল হক ইটভাটার মৌসুমি শ্রমিক। মা শারজিনা বেগম গৃহিণী। ১ শতাংশ বসতভিটায় টিনের ছাপরা দেওয়া মাটির ছোট্ট একটি ঘর। এই ঘরে থাকেন সাজেদুলের মা-বাবা ও একমাত্র বোন জেরিনা খাতুন। ছনের ছাউনি দেওয়া বারান্দায় থাকার পাশাপাশি পড়াশোনা করেন সাজেদুল।

 

সাজেদুল ইসলাম ২০২০ সালে বদরগঞ্জ উপজেলার আজাদ শালবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৬৭ এবং ২০২২ সালে স্থানীয় লালদীঘি পীরপাল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর একটি ফাউন্ডেশনের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে ঢাকায় বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে মেধাতালিকায় ৭৩১তম হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে ১৬৯তম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটে ৩৪৬তম হয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় ১১৫তম হয়েছেন সাজেদুল।

 

সাজেদুলের ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার। নইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তি হতে চান তিনি। পড়াশোনা শেষে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছা তাঁর।

 

 

এসএসসি ও এইচএসসিতে ফরম পূরণের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন প্রতিবেশী চাচা নুরন্নবী ও এমদাদুল হক। সাজেদুলের বাবা আবদুল গফুর বলেন, ‘ছইলটা (ছেলেটা) ইস্কুল-কলেজোত ভর্তি হয়া সপ্তাহে ৩-৪ দিন মাইনসের বাড়িত কাজকাম করিয়া পড়ার খরচ চলাইছে। এ্যালা শোনোচি ঢাকাত ভর্তি হইতে নাকি অনেক টাকা নাগবে। হামরা দিন করি দিন খাই। তোরায় কনতো, অতোগুলা টাকা হামরা কোনটে পাই!’

 

ছনের ছাউনি দেওয়া বারান্দায় থাকার পাশাপাশি পড়াশোনা করেন সাজেদুল

সাজেদুলের মা শারজিনা বেগম বলেন, ‘হামার খুব কষ্ট। খায়া না খায়া দিন কাটে। অর (সাজদুলের) ভর্তি করার কোনো বুদ্দি নাই হামার।’

 

লালদীঘি পীরপাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাজেদুল অনেক মেধাবী ও বিনয়ী ছেলে। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরির কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে এত দিন। কলেজ থেকেও সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন সহযোগিতা পেলে ছেলেটা এগিয়ে যেতে পারবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর