সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি ও সহযোগিতার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
  • আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি
  • র‌্যাব পুনর্গঠন করা হবে, পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নেপালের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সাক্ষাৎ
  • গেজেট এলে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে
  • দেশের ইতিহাসে গুমের সূচনা করেছে আওয়ামী লীগ
  • ফ্যাসিস্ট শাসকের পলায়নে গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে
  • স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন
  • শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা
  • মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষমতা পেলো সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কবিতা

আমি বীরাঙ্গনা

নাজমুন নাহার

প্রকাশিত:
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ২১:০৬

আমি বীরাঙ্গনা, হ্যাঁ বীরাঙ্গনা তোমাদের কথায়।
বলতে আমার এতটুকুও লজ্জা নেই,
আমি কুণ্ঠিত নই, আমি লজ্জিতও নই
নই এখন আর কারও ভয়ে ভীত,
আমি নিজেকে মনে করিনা আমি কলঙ্কিত।

তখন ষোলো বছরের কিশোরী আমি
দেশের ডাকে যুদ্ধে গেছে আমার স্বামী।
যাবার বেলায় বলে গেছে অপেক্ষাতে থেকো
ফিরব আমি স্বাধীন দেশে বুকের রক্তে রাঙ্গানো লাল সবুজের পতাকাটাকে নিয়ে।

দু ভাই আমার হয়েছে শহীদ দেশের জন্য
মা মরা আমি বাপ ভাইয়ের দুলারী।
বাকি দুজনও যুদ্ধে যাবে প্রস্তুতি যেন চলে,
স্বামীতো এলো লড়াই করে বুকের রক্ত
রাঙ্গিয়ে দিয়ে নিথর ঐ দেহখানি নিয়ে।

বৃদ্ধ শ্বশুর - শাশুড়ির ঘরে একা আমি
রূপসী ,বিধবা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
দেশোদ্রোহী, বেঈমান চাটুকারের লোলুভ দৃষ্টি
বানায় পাক সেনাদের মনোরঞ্জনের খোরাক,
শ্বশুরের বুকে লাথি মেরে হিঁচড়ে নেয় আমায়।

আমি তো নিজের ইচ্ছেতে যাইনি তাদের কাছে
তবু কেন আমার কপালে জোটে নানান অপবাদ?
আমি কেন হই অচ্ছুৎ তোমাদের কাছে?
কেন আমি হই কলঙ্কিত? কোন অপরাধে?
স্বাধীনতায় আমার নেই কি কোনওই বলিদান?

আমি বীরাঙ্গনা, হ্যাঁ আমি হলাম বীরাঙ্গনা
দেশের জন্য হইনি শহীদ অস্ত্র ধরিনি হাতে।
পাক সেনাদের উপর্যুপরি অত্যাচারে
গর্ভেই মরে গেছে আমার নিষ্পাপ শিশু।
তবুও রেহাই মেলেনি ছাড়েনি হায়েনার দল।

পাঁচ মাসের সন্তান আমার হয়েছে বলি
এই দু হাতে রক্তস্নানে ভেসে যেতে দেখেছি তাকে।
এক বন্দী শিবির থেকে আরেক বন্দী শিবিরে
এভাবেই হাত বদলে কত হাতে গিয়েছি আমি।
তবুও কি তোমরা বলবে আমায় আমি কলঙ্কিনী?

সর্বক্ষণ ভেবেছি গলা টিপে ধরি শয়তান দলের
কখনও ভেবেছি গলার নলি কামড়ে ছিঁড়ে ফেলি।
দু হাত বাঁধা দু পায়ে শিকল বেয়নেটের গুঁতা
তবুও ঘৃণায় থুতু ছিটাতে ছাড়িনি একদিনও
বেড়ে গেছে গরম ডিমের অত্যাচার তবুও দমিনি।

যুদ্ধ শেষে, পাগলিনী বেশে উদ্ধার যদিও মেলে
হয়নি শেষ রক্ষা নরপশুর রক্ত আমার গর্ভে।
মেলেনি বাবার ঘরে জায়গা শ্বশুর দিয়েছে তাড়িয়ে
সমাজপতির বিচারে হয়েছি আমি গ্রাম ছাড়া
জায়গা মেলে শেষ পর্যন্ত কোনও এক সংগঠনে।

নিজ হাতে গলাটিপে চেয়েছি মারতে সর্প বংশধর
মা আমি পারিনি তাই, নীলকণ্ঠ পান করে
জন্ম দিয়েছি দেখিয়েছি পৃথিবীর আলো ।
না পারিনি ভালোবেসে বুকে টেনে নিতে তাই
যুদ্ধ শিশু নামে কোনও এক দেশে আছে বেঁচে।

আমি বীরাঙ্গনা , হ্যাঁ আমি গর্বিত আমি বীরাঙ্গনা
স্বাধীনতা সংগ্রামে একটু হলেও আমার অবদান
ছোট করে দেখবার নেই কোনও অবকাশ।
তোমাদের দেয়া সম্মানে আমার নেই কোনও লোভ
হ্যাঁ আমি বীরাঙ্গনা এ আমার ভালোবাসা।

এ আমার অহঙ্কার ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর
মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে লক্ষ বীরাঙ্গনার অবদান
রয়েছে পৃথিবীর বুকে নতুন মানচিত্র আঁকতে ।
নতুন একটি দেশ বাংলাদেশ সগর্বে মাথা উঁচিয়ে
আজও আছে দাঁড়িয়ে আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

২৭ জুন ২০২০ইং


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর