প্রকাশিত:
৬ মে ২০২৫, ১৩:৩৫
চার মাস চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে বহনকারী বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর থেকেই রাজধানী ঢাকা যেনো একটি নতুন প্রাণ পেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকের এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তির ফেরা নয়, এটি এক নতুন প্রত্যয়ের সূচনা।
যে নেত্রী দীর্ঘকাল ধরে আপোষহীন থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়েছেন, তাঁর ফিরে আসা আমাদের জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।”এভাবেই আবেগঘন কণ্ঠে প্রতিক্রিয়া জানালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চার মাসের প্রবাস, ফিরোজায় ফেরত
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন তাঁর দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। বিমানবন্দর থেকে ফিরোজার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। পুরো রাস্তাজুড়ে হাজারো নেতা-কর্মীর ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, আর মুখে ছিল খালেদা জিয়া ফিরে এসেছেন, গণতন্ত্র বাঁচবে” ধ্বনি।
গুলশানের ফিরোজা বাড়ির সামনে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়াকে এক ঝলক দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও জনগণের উচ্ছ্বাস থামিয়ে রাখা যায়নি।
গুজবের অবসান, গণতন্ত্রের বিজয়
গত কয়েক মাস ধরে রাজনীতির মাঠে নানা গুজব ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কেউ বলছিলেন, বিএনপি এখন নেতৃত্বহীন। কেউ বলেছিলেন, খালেদা জিয়া আর ফিরবেন না। কিন্তু সব গুজবকে মিথ্যা প্রমাণ করে তিনি ফিরেছেন।
এই প্রত্যাবর্তন নতুন করে উজ্জীবিত করেছে বিএনপিকে। অনেকেই বলছেন, মাইনাস টু” নামের গুজবকে চূড়ান্তভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো হলো আজ। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান যখন তার সমর্থকদের মাঝে ফিরে আসেন, তখন সেটি কেবল দলের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
এক জীবন গণতন্ত্রের জন্য উৎসর্গ
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮১ সালে, যখন তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে তিনিই ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা বিস্তার ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়। বিশেষ করে নারীশিক্ষা, দরিদ্র বিমোচন ও রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রসারে তার উদ্যোগ স্মরণীয়।
জেল-জুলুমেও নতি স্বীকার করেননি
২০০৭ সালে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক চাপে ফেলা হয়। একাধিকবার তিনি কারাবরণ করেন। এরপরেও তিনি কখনো আপোষ করেননি, কখনো মাথা নত করেননি। এই আপোষহীন মনোভাবের জন্যই আজ তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত।
২০২১ সালে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসা নেন।
তারেক রহমান ও নতুন নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে। তার নেতৃত্বে বিএনপি দলকে সংগঠিত রাখে, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট তুলে ধরে এবং সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখে।
তবে আজ খালেদা জিয়ার ফেরার মাধ্যমে বিএনপি যেনো তার পূর্ণ নেতৃত্ব কাঠামো ফিরে পেল। একজন মা যেমন পরিবারের কেন্দ্রে থাকেন, তেমনি খালেদা জিয়া এই দলের প্রাণ।
নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের যে সুদীর্ঘ পথচলা, তার অন্যতম পথিকৃৎ বেগম খালেদা জিয়া। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিই ছিলেন নারী ক্ষমতায়নের বাস্তব উদাহরণ। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বহু নারী রাজনীতিতে আগ্রহী হন।
বিরোধীদলের ভূমিকা ও আগামীর সম্ভাবনা
বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি। দেশের মানুষ চায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, ন্যায্য নির্বাচন হবে, এবং উন্নয়ন হবে সবার জন্য।
খালেদা জিয়ার ফেরা তাই শুধু বিএনপির জন্য নয়, পুরো দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের বার্তা বহন করে।
উৎসবের আবহ এবং ভবিষ্যতের সংকেত
আজকে বিএনপির প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উৎসবে মেতে উঠেছেন। সামাজিক মাধ্যমে #WelcomeKhaledaZia ট্রেন্ডিং করছে। দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।
এ যেনো এক নতুন জাগরণ। এক নতুন প্রত্যয়। আর সেই প্রত্যয়ের কেন্দ্রে আছেন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ খালেদা জিয়ার ফিরে আসা শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের জনগণের মনে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। তিনি শুধু একটি দলের নেত্রী নন, বরং একজন প্রতীক, একজন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সংগ্রামী, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দেশের জন্য, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ে গেছেন।
বাংলাদেশ আজ হাসছে। কারণ, খালেদা জিয়া ফিরে এসেছেন। গণতন্ত্র ফিরে আসছে।
মন্তব্য করুন: