প্রকাশিত:
৭ মে ২০২৫, ১৫:৪৪
মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে চায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তারই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনের বিশাল ফ্লোর ভাড়া দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
তবে মেট্রোরেল স্টেশনের বাণিজ্যিক ব্যবহার করলে এর পরিবেশ নোংরা হওয়ার আশঙ্কা করছেন অংশীজনেরা। তারা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশন চকচক করছে। কোনো স্টেশনে মায়লা-আবর্জনা বা নোংরা দেখা যায় না। এখন যদি মেট্রোরেল স্টেশনের বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়, তাহলে নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ডিএমটিসিএলকে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বিদ্যমান মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬ এর ১৬টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার স্টেশন তিন তলাবিশিষ্ট। এ দুটি স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট ফাঁকা জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমটিসিএল। তারই অংশ হিসেবে গত ৩০ এপ্রিল ওই দুটি স্টেশন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ডিএমটিসিএল- এর পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, ডেইলিশপ, ব্যাংক বা অফিস কিংবা অন্য কোনো কাজে ভাড়া নিতে আগ্রহীরা মেট্রো স্টেশনের সংশ্লিষ্ট ফ্লোর ব্যবহার করতে পারবেন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচন করা হবে। ভাড়ার প্রস্তাব বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স বা যমুনা ফিউচার পার্কের ভাড়ার সমান বা বেশি হতে হবে। ইজারার মেয়াদ ১০ বছর, যা নবায়নযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম খায়রুল আলম বলেন, মেট্রোরেলের নিজস্ব আয় বাড়ানোর জন্যই ওই দুটি স্টেশনে স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। যারা এসব স্পেসের বাণিজ্যিক ব্যবহার করবেন, তারা অবশ্যই পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবেন। ভাড়ার শর্তে তা উল্লেখ থাকবে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলের এই দুটি স্টেশন ভাড়া দেওয়ার একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটি হলো, এখন টিকিট বিক্রি করে মেট্রোলেরের যে আয় হয়, তা দিয়ে ভবিষ্যতে মেট্রোরেল পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। কারণ, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে মেট্রোরেল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় এবং বিদেশি ঋণ ডিএমটিসিএলকে বহন করতে হবে। তাই ডিএমডিসিএল এর নিজস্ব আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে মেট্রোরেল চালু হয় এবং ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পুরো রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ডিএমটিসিএলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম অর্থবছরে (২০২২-২৩) টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকায়।
কিন্তু এ আয় দিয়েই সব খরচ মেটানো সম্ভব নয়, কারণ দৈনন্দিন ব্যয়ের পাশাপাশি জাইকার থেকে নেওয়া ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে স্টেশনগুলোর ফাঁকা জায়গা ভাড়া দেওয়ার উদ্যোগকে সম্ভাবনাময় বলে মনে করছে ডিএমটিসিএল।
মেট্রোরেল যাত্রীদের জনপ্রিয় অনলাইন প্লাটফর্ম ‘মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জারস কমিউনিটি ঢাকা’। এই প্লাটফর্মে এক লাখ ৬ হাজার ৫০০ সদস্য রয়েছে। তাদের একজন কামরুল ইসলাম। আলাপকালে তিনি বলেন, মেট্রোলের আয় বাড়ানোর নামে ওই দুটি স্টেশনের ফাঁকা জায়গা ভাড়া দেওয়ার উদ্যোগ যুক্তিসংগত। কিন্তু এ বাণিজ্যিক ব্যবহারের কারণে যদি মেট্রোরেল গুলিস্তান হয়ে যায় তার দায়ভার কে নেবে? ডিএমটিসিএলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কারণে যাত্রীদের যাতে ভোগান্তি না হয় তাও খেয়াল রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন: