প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৫, ১২:৩৬
ভারতে অনুষ্ঠিত ২১তম দিল্লি আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে দুঃখজনক এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি দাবাড়ু রানি হামিদ।
বার্ধক্যের কারণে দাবার রানিখ্যাত ৮২ বছর বয়সী এই দাবাড়ু একজন সঙ্গী নিয়ে ভ্রমণ করেন। যথারীতি দিল্লির দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে ঈদের আগের দিন সফরসঙ্গী নিয়ে ভারতে রওনা দেন। কিন্তু তার সফরসঙ্গী আছিয়া সুলতানাকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয় এবং পরদিন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
৩৭ বছর বয়সী আছিয়া সুলতানা নিজেও একজন দাবাড়ু এবং দিল্লি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জানা গেছে, আগের এক সফরে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে কলকাতায় দাবা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করায় ভারতীয় রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে।
কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় রাতভর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সেন্টারে আটকে রেখে পরদিন দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট কিনে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে দেশে পাঠায় ভারত।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রানি হামিদ সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত। যে মেয়েটি আমার সঙ্গে এসেছিল, তাকে ঢুকতেই দেয়নি। পুরো রাত সে ইমিগ্রেশনে বসে ছিল। লাগেজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পরদিন তাকে বাধ্য করা হয় দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট কিনে দেশে ফিরতে।’
এ বিষয়ে আছিয়া জানান, ‘আমার মেডিক্যাল ভিসা ছিল। তখন কাশ্মীরে একটি টুর্নামেন্টে খেলেছিলাম। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় খেলে চলে এসেছিলাম। বিষয়টি ইমিগ্রেশন কর্তাদের ব্যাখ্যা দিলেও তারা কিছু শোনেননি। ভারতের দাবা সংগঠনের লোকজনও সহযোগিতা করেছেন, জরিমানা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল, কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি।’
আছিয়া সুলতানা দেশের দাবা অঙ্গনে নতুন হলেও আন্তর্জাতিক রেটিং রয়েছে। গত দু-তিন বছর ধরে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। তিনি সম্প্রতি রানি হামিদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায়ও খেলেছেন।
এদিকে দিল্লিতে একা হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার রানি হামিদ। তিনি জানান, ‘আমি কখনো একা ভ্রমণ করি না। বয়স হয়েছে। আছিয়া ছিল আমার সঙ্গে, ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আমি একা পড়ে গেছি। খেলায় মনোযোগ দিতে পারছি না।’
রানি হামিদের ছেলে, সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার কায়সার হামিদ মায়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মা একা বিদেশে থাকতে পারেন না। আছিয়া তার সঙ্গে কয়েকটি টুর্নামেন্টে সফর করেছে। এখন সে না থাকায় মা অনেক বিপদে পড়েছেন। আমরা খুবই চিন্তিত।’
দিল্লি টুর্নামেন্ট শেষে রানি হামিদের মুম্বাইয়ে আরেকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও আছিয়ার অনুপস্থিতিতে সেটি এখন অনিশ্চিত।
উল্লখ্য, দিল্লি গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টের বিশেষ অতিথি ছিলেন রানী হামিদ। আন্তর্জাতিক দাবা মহলে তিনি শুধু খেলোয়াড় নন, তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গণ্য হন। এমন কিংবদন্তির দিল্লিতে এই বিড়ম্বনায় পড়া এবং সঙ্গী আছিয়ার দেশে ফেরত আসার বিষয়টি ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: